অপেক্ষার প্রহর যেন অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ হয়ে দাঁড়িয়েছে-জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী
বাবা মারা গেছে গত বছর। অসুস্থ মা আর ৪ ভাইবোনের মধ্যে পরিবারের বড় সন্তান হিসেবে সমস্ত দায়িত্ব আমার উপর ই অর্পিত। ২০১৯ সালে স্নাতক(সম্মান) ডিগ্রি অর্জন করার কথা থাকলেও আজ ২০২১ এর শেষের দিকে এসে ও ডিগ্রিটা যেনো ধরা ছুঁয়ার বাইরে। একটা কাগজ যেনো প্রতিটা স্বপ্ন পূরণের হাতিয়ার। আগে যদি জানতাম এই দেশে শিক্ষার এই দশা হবে তাহলে ছোট থেকেই একটা কাজে লেগে যেতাম।
কিছুদিন একটা হোটেলে ওয়েটারের কাজ করেছি। যা মাইনেদেয় তা দিলে একটা সংসার চালানো সম্ভব হয়ে উঠে না। মা অসুস্থ, প্রতিদিন ই ওষুদ কিনতে হয়। করোনা পরিস্থিতিতে অবস্থা আরও করুন হচ্ছে।
সবাই শুধু কেমন আছি এটা জিজ্ঞেস করে, কেউ জিজ্ঞেস করে না শেষ কবে ভাত খেয়েছি। নিষ্ঠুর এই দুনিয়ার মানুষের বিবেকের কাছে একটা প্রশ্নের উত্তর মরিয়া হয়ে খুঁজছি তা হলো-আমি কি সত্যি ই স্বাধীন দেশের নাগরিক? আমার কি সত্যি ই নাগরিক অধিকার আছে? আমি তো মৌলিক অধিকারগুলো থেকেই বঞ্চি-অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা সব কিছু থেকেই বঞ্চিত”
গল্পগুলো এভাবেই বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন কুড়িগ্রামের অনার্স পড়ুয়া এক ছাত্র- মোঃ সাখাওয়াত হোসেন।
এই মুহূর্তে কি কি পদক্ষেপ সরকারের নেয়া উচিত বলে তার মনে হয়-এই বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ” গত নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত করোনার সংক্রমণ নিম্নমূখী ছিলো। সরকার চাইলে ই পরীক্ষাগুলো নিয়ে নিতে পারতো। লাখ লাখ শিক্ষার্থী আজ মারাত্বক সেশন জটে পরেছে শুধুমাত্র সরকারের ভুল সিদ্ধান্তের জন্য। অপরিদিকে বাংলাদেশের সকল কিছু স্বাভাবিক রয়েছে। বাজার ঘাটে এখনো হাজারো মানুষের সমাগম, স্বাস্থ্যবিধির নাম মাত্র ও নেই। আন্দোলন নির্বাচন সব চলছে। ফ্যাক্টরি অফিস আদালত সকল কিছু চলমান রয়েছে। পর্যটন এলাকাগুলোতে পা রাখার জায়গা টুকু ও নেই।
শুধুমাত্র এবং কেবলমাত্র শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ই করোনা। এটা খুলে দিলেই দেশ করোনাতে ভরে যাবে।
করোনার প্রজনন কেন্দ্র হচ্ছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। যদি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ই সমস্যা থাকে তাহলে আমাদের পরীক্ষা গুলো শপিং মলে সিঙ্গেল চেয়ার দিয়ে আসন করে নিয়ে নিলেই পারে। কিন্তু সরকার তা করবে না।
গার্মেন্টে লাখ লাখ শ্রমিক কাজ করে সমস্যা হয় না। তাহলে আমাদের পরীক্ষাগুলো গার্মেন্টে নিয়ে নেন। আসলে এসব নামমাত্র বাহানা। করোনার অযুহাত দিয়ে দেশ থেকে শিক্ষা বিলুপ্ত করে দেয়ার নীলনকশা আকঁছে সরকার।
এর ফলে হবে কি নতুন কোন শিক্ষিত চাকরি ক্যান্ডিডেট থাকবে না। যার ফলে পূর্বে থেকে নির্ধারণ করা উপরমহলের আত্মীয়স্বজন ই বর্তমান চাকরির চেয়ার গুলো দখল করতে পারবে। বংশপরম্বরায় উত্তোরাধীকার সূত্রে চাকরি পেয়ে যাবে। নতুন কোন শিক্ষিত থাকবে প্রতিবাদ করার মতো। বিট্রিশ শাসনের হাত থেকে রক্ষা পেয়ে ও আজ আমরা পরাধীন। এমতাবস্থায় সকল শিক্ষার্থীদের প্রতি আমার উদার্ত আহ্বান অধীকার আদায় করে নিন। সবাই চুপ থাকলে খুব শীঘ্রই শিক্ষা নামক শব্দটা ই বিলীন হয়ে যাবে।
শুধু সাখাওয়াত নয়, এরকম হাজারো জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া সাখাওয়াত স্বপ্নগুলো কবর দিচ্ছে। বয়স চলে যাচ্ছে এই বিষয়ে সরকার একটি সিদ্ধান্ত নিবে এটা ই প্রত্যাশা সকলের।