বুয়েটে সুযোগ পেয়েও অর্থাভাবে ভর্তি হতে পারছেন না আল আমিন
সখীপুর (টাঙ্গাইল)ঃ আল আমিন। দরিদ্র পরিবারে জন্ম। চার বছর বয়সে মা মারা যান। বাবা ভ্যান চালক। তবুও ভালো বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে চালিয়ে গেছেন পড়াশোনা।
অবশেষে স্বপ্ন ধরা দিলে বাস্তবায়ন নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে আল মেধাবী ছাত্র আল আমিনের। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যলয়ে (বুয়েট) ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং (আইপিই) বিভাগে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন আল আমিন। এর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও (ঢাবি) ভর্তির সুযোগ পেয়েছিলেন।
কিন্তু অভাব অনটনের সঙ্গে বড় হওয়া আল আমিনের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি ও পড়াশোনা খরচ চালানোর সামর্থ্য নেই আল আমিনের পরিবাসোমবার (১৯ জুন) প্রকাশিত ফলাফলে দেখা গেছে, বুয়েটে মেধা তালিকায় আল আমিনের স্থান ১০২০তম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) ৩৮৭২তম। এছাড়াও মেধাবী এ শিক্ষার্থী জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যলয়ে ১৫তম, গুচ্ছে ১০৭তম স্থান অধিকার করেন।
পরিবারের সকল প্রতিকূলতাকে জয় করে বুয়েটে ভর্তির সুযোগ পেলেও ভর্তি নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। এ নিয়ে তার ভ্যান চালক বাবা দুশ্চিন্তায় পড়েছেন।
সরেজমিন দেখা যায়, চার ভাই বোন, বাবা-মা, দাদা-দাদিসহ ৮জনের সংসার। টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার কচুয়া গ্রামের কুঁড়েঘরে সবার সঙ্গে বসবাস আল আমিনের।
চার ভাই বোনের মধ্যে আল আমিন দ্বিতীয়। ছোট দুই ভাই বোনও পড়াশোনা করছে। বাবা আজিজুল মিয়া ভ্যান চালিয়ে দিনমজুর খেটে সন্তানকে পড়াশোনা করিয়েছেন। দাদা দাদিও কষ্ট করেছেন আল আমিনের জন্য।
প্রত্যন্ত অঞ্চলের প্রতিষ্ঠান কচুয়া পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ৪.৭২ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। পরে সখীপুর সরকারি মুজিব কলেজের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ ৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়ে এবার বুয়েটে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন।
আল আমিন বলেন, আমার বাবা-দাদা ভ্যান চালিয়ে আমার পড়াশোনার খরচ চালাতেন। এমন একটি পরিবার থেকে পড়াশোনা করা অনেক কষ্টসাধ্য ছিল। আমার বয়স যখন চার বছর, তখনই আমার মা মারা যান। আমার বাবা, দাদা-দাদি আমাকে পড়াশোনায় সব সময় উৎসাহ দিতেন। দরিদ্র থাকার পরও পিছপা হয়নি। আমার বিশ্বাস সকলের সহযোগিতায় পেলে আমি আমার স্বপ্ন পূরণ কআল আমিনের বাবা আজিজুল মিয়া বলেন, টাকার অভাবে ছেলেকে প্রাইভেট পড়াতে পারি নাই। ভালো কোনো কোচিং সেন্টারে ভর্তি করতে পারিনি। নুন আনতে পান্তা ফুরায় অবস্থা। তিনি আক্ষেপে করে বলেন, ঢাকায় সন্তানকে রেখে পড়াশোনা করাতে গেলে অনেক টাকার দরকার। এখন ছেলের ভর্তির জন্য টাকা কোথায় পাব? কে দেবে টাকা? সমাজের বিত্তবানদের কাছে ছেলের পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়ার জন্য সহযোগিতা কামনা করছি।
কচুয়া পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তুলা মিয়া বলেন, আল আমিন আমাদের বিদ্যালয়ের একজন মেধাবী শিক্ষার্থী। তার এ সাফল্যে আমরা গর্বিত। সে খুব শান্ত ও সহজ সরল । আমার বিদ্যালয়ের পড়ার সময় যথেষ্ট সহযোগিতা করেছি। এখন বুয়েটে চান্স পেয়েছে। অর্থ অভাবে বুয়েটে ভর্তি নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছে। সবাই যদি তাকে সহযোগিতা করে তবে তার ও পরিবারের স্বপ্ন পূরণ হবে।
সখীপুর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাত লতিফ বলেন, আল আমিন আমার গ্রামের অত্যন্ত মেধাবি ছাত্র। দরিদ্রকে জয় করে এতদূর এসেছে। এখন অর্থের অভাবে আল আমিন যেন ছিটকে না পড়ে। এমন মেধাবী শিক্ষার্থীদের সহযোগিতায় সকলকে এগিয়ে আসা উচিত।
সখীপুর উপজেলার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারজানা আলম বলেন, উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাকে অভিনন্দন জানাই। আল আমিন একজন নিম্নবিত্ত পরিবারের মেধাবী সন্তান। সখীপুর উপজেলা প্রশাসন সব সময় তার পাশে থেকে সহায়তার করবে।রতে পারবো।