অনলাইনে যে উপায়ে পড়াশুনা করা উচিত

** অনলাইনে যে উপায়ে পড়াশুনা করা উচিত **

বর্তমান ডিজিটাল বাংলাদেশে আমরা চাকরিপ্রার্থীরা শুধু যে বই পড়ি তা নয়। বিভিন্ন ফেসবুক পেইজ ও গ্রুপ, ইউটিউব, উইকিপিডিয়া, অনলাইন পত্র-পত্রিকা প্রভৃতি থেকে অনবরত তথ্য নিচ্ছি। মনে একটা তৃপ্তিও জাগছে যে, যাক! পড়ছি তো! কিন্তু আপনি হয়ত জানেন না, এতে লাভের বদলে আপনার ক্ষতিই হচ্ছে বেশি। এখন, আপনি অনলাইন ছাড়া বর্তমানে চাকরির প্রস্তুতিও নিতে পারবেন না। কারণ, বিভিন্ন সার্কুলার, নতুন নতুন বিষয় নিমিষের মধ্যে পেতে এইসব মাধ্যমের বিকল্প নেই। প্রথমেই জেনে নিই কী কী ক্ষতি হচ্ছে অনলাইনে পড়াতে-

অনলাইনে পড়াশুনায় যেসব ক্ষতি হচ্ছে:
১. আপনি যাই পাচ্ছেন তাই পড়ছেন, ফলে আপনার মূল্যবান সময় নষ্ট হচ্ছে। অপ্রয়োজনীয় তথ্যে মস্তিষ্ক ভর্তি হচ্ছে।

একটা উদাহরণ দিই। যেসব তথ্য নিয়ত হালনাগাদ এর প্রয়োজন পড়ে, সেসব মুখস্থ করতে করতেই আপনি সময় পার করছেন। শুধু একবার প্রশ্ন ঘেঁটে দেখুন তো, বি.সি.এস. এ এমন সাম্প্রতিক প্রশ্ন আসে কত শতাংশ?

যেসব তথ্যের পরিবর্তন হয় না, যা বিভিন্ন পরীক্ষায় বারবার আসে, যা অনেক বেশি দরকারি সেসবই তো আমরা চর্চার অভাবে মনে রাখতে পারি না। আর আপনি দুইদিন পর পর পরিবর্তন হয়, এমন তথ্য মুখস্থ করতে গিয়ে মাথা খাচ্ছেন!

উত্তর দিন তো, বঙ্গবন্ধুসহ আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার মোট আসামী কতজন? ৩৪ নাকি ৩৫!

পারলে ভালো, না পারলে চিন্তা করুন, এত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য, যা বিভিন্ন পরীক্ষায় আসে, বারবার পড়েও তা মনে থাকে না, আর আপনি পড়ছেন সাম্প্রতিক, তাও একবার!

২৷ অনলাইনে পড়াশুনা পরে খুঁজে পাওয়া যায় না। আপনি যখন অনলাইনে পড়েন তা পছন্দ হলে সচরাচর ফেসবুকে নিজের প্রোফাইলে কপি বা শেয়ার করেন। যাতে আপনি তা আবার পড়তে পারেন। দাদাভাই, পরে পড়েন কি!
সম্ভাবনা বেশি আপনি পড়েন না। কারণ একগাদা পোস্টের ভীড়ে আপনার দরকারী জিনিস গুম হয়ে গেছে। ওটা বের করতে করতে পড়ার ইচ্ছাই শেষ হয়ে যায়। অর্থাৎ, পড়াশুনাটা ব্যর্থ হয়ে গেলো!

৩. এই ক্ষতিটা হলো ভয়ানক। ‘নে গে টি ভ মার্কস’। হ্যাঁ, অনলাইনে পড়াশুনা করলে নেতিবাচক নম্বর পাবার সম্ভাবনা বাড়ে। বুঝিয়ে বলি। নেতিবাচক উত্তর সাধারণত দুই কারণে হয়-
ক. জীবনে প্রথম বি.সি.এস. দিতে এসেছেন। দেখলেন মোটে ৫০-৬০ টা পারেন। এইসব পূরণ করে বাকি সময় সময় বসে থাকবেন? নাহ, আপনি ছড়া আবৃত্তি করবেন-
“পাটার মুড়া নোড়োত বোড়োত
কায় পাদিসে মোড়ে গোরোত।”

গ- তে গিয়ে কলম থেমেছে। অতএব, উত্তর গ। এই রকম নানা সৃষ্টিশীল উপায়ে আপনি পরিশেষে ২০০ টা বা কিছুক্ষেত্রে তারও বেশি দাগিয়ে, পরীক্ষা শেষ করবেন। শেষে দেখা যাবে, এমনও হতে পারে আপনারই কাছে নম্বর পাবে। পরের বার পরীক্ষা দিলে কেটে নেবে।😁

খ. পরীক্ষার হলে আপনি ভালোই পারছেন। কিন্তু মনে মনে হিসেব করছেন, এই কয়টা মার্কস দিয়ে তো প্রিলি পাস হবে না, এই প্রশ্নটা চেনা চেনা লাগছে এইটা দাগাই। বিশ্বাস করুন, যেসব প্রশ্ন চেনা চেনা লাগে সেইসব প্রশ্ন ছেড়ে আসা ‘ক্রাশ সামনে দিয়ে যাচ্ছে, তার দিকে দ্বিতীয়বার না দেখা’র চেয়েও শতগুণে কঠিন। প্রশ্ন করুন তো, কোন প্রশ্নগুলো চেনা চেনা লাগে! যেগুলো বাস্তবেই কোথাও না কোথাও আপনি পড়েছেন। কিন্তু যথেষ্ট ভালোভাবে নয়, সেইসবই আসলে নেগেটিভ মার্কিং এর কারিগর। অতএব, হালকার উপরে ঝাপসা পড়া থেকে সাবধান।

৪. এছাড়া, চোখের পানি শুকিয়ে যাওয়া, মাথা ব্যথা হওয়া, কাগজের বই পড়ায় অমনোযোগ আসা, অস্থিরতা, মেজাজ খিটখিটে হওয়া, পড়ার নাম করে ফোনে অন্য কাজ করে সময় নষ্ট, ঘুম কমে যাওয়া ইত্যাদি আপনারা সবাই কমবেশি জানেন। এইসব বিষয়ে বিস্তারিত লিখলাম না।

এতসব ক্ষতির জন্য অনলাইনে পড়াশুনাকে কি আমরা ভয়ানক বলতে পারি না?
তবে কি অনলাইনে পড়াশুনা বাদ দেবো? যেহেতু অনলাইনের বিকল্প নেই, তাই অনলাইন লাগবেই। কিছু উপায় বের করার চেষ্টা করা যায়। যেসব পদ্ধতি অবলম্বন করে এইসব ক্ষতির হাত থেকে বেঁচে বরং লাভবান হওয়া সম্ভব সেসব আলোচনা করছি।

উপায়:

১. যেমনটা আমি বই এর ক্ষেত্রে বলে থাকি, ঠিক তেমনি বেশি ফেসবুক গ্রুপেও যুক্ত থাকা উচিত নয়। কম গ্রুপে যুক্ত থাকলে সময় অপচয় কমবে। দুই তিনটা গ্রুপ সর্বোচ্চ।

২. অনলাইনে কোনো কিছু পড়াশুনা করার মত জরুরি মনে হলে এই কয়েকটা প্রশ্ন নিজেকে করুন-

ক. আসলে কি এইটার প্রয়োজন আছে?

খ. যখন পরীক্ষা হবে, তখন পর্যন্ত কি এই জিনিস গুরুত্বপূর্ণ থাকবে?

গ. পরীক্ষার হল পর্যন্ত কি এই জিনিসকে আমি নিয়ে যেতে পারব? (মানে রিভাইস দিতে পারব কিনা)

এই প্রশ্ন ৩ টার প্রত্যেকটার উত্তর ইতিবাচক হলে অবশ্যই পড়ুন। না হলে কক্ষনো না। মনে রাখবেন, কী কী পড়ব তার চেয়ে কী কী বাদ দেব তাই বড় বিষয়। কোনো কিছু পড়তে চাইলে, পড়ার এবং সেইসব সংরক্ষণের উপায় ৪ নং পয়েন্টে আলোচনা করা হলো-

৪. বিভিন্ন উপায়ে পড়া সংরক্ষণ করা যায়। কখন কোন পোস্ট হারিয়ে যায় এই চিন্তায় আপনি প্রথমে অনলাইনে নিজের একান্ত ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজে পড়া কপি পেস্ট করে রাখতে পারেন। অথবা, প্রিন্ট করতে পারেন। মনে রাখবেন এটা সাময়িক। এভাবে রেখে দিলে পড়ে আর পড়া হবে না। বই পড়তে বসেই আপনার কাজ হবে-
ক. ঐ পড়া থেকে দরকারি পড়া বের করে ঐ পড়াগুলো যেসব বইয়ের যেসব অধ্যায়ে আছে সেখানে যাওয়া। সেগুলোতে দাগ দেয়া।

খ. বই আর ঐ পড়া এক হলে তো খাটনি নেই। কিন্তু, ভিন্ন হলে অথবা বইতে না থাকলে অথবা আপডেট তথ্য হলে বইয়ের ঐ পৃষ্ঠার উপরে নিচে যেসব অংশে ফাঁকা আছে সেসব অংশে টুকে রাখা।(বিশ্বাস করুন হেব্বি কাজে দেয়)

গ. কোনো তথ্য বইতে একেবারে না থাকলে আলাদা কাগজে লিখে রাখুন। পারলে বইয়ের ফাঁকে কাগজে আঠা দিয়ে সেঁটে রাখুন। (রানী এলিজাবেথ ছবি দেখুন) মনে রাখবেন এমন তথ্য কখনই বেশি হবে না। বেশি হলে বুঝবেন, আপনি অপ্রয়োজনীয় জিনিস একত্র করছেন। এই উপায়ে আপনি পরীক্ষার পূর্বে এক মলাটে সব পেয়ে যাবেন। রিভাইস দিতে পারবেন।

ভুল-ত্রুটি মাফ করবেন।

বি.দ্র.- ভালো করে বোঝানোর জন্য ছবিগুলো দেয়া হলো।

Debashis Chandra Adhikary
40 th BCS
General Education Cadre Officer
(Recommended)

About Ruma Khatun

আমি একজন সরকারি চাকরিজীবী। আমি শিক্ষার্থীদের জন্য অবসর সময়ে লেখা-লেখি করি। আমি সরকারি বি এল কলেজের সাবেক শিক্ষার্থী।

Check Also

ডেঙ্গুজ্বরের লক্ষণ, গুরুতর উপসর্গ ও প্রতিকার

ডেঙ্গুজ্বরের লক্ষণ, গুরুতর উপসর্গ ও প্রতিকার   দিনে দিনে ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। …

Leave a Reply

Apply Online Here